Select Page

পৌরসভা সম্পর্কে

তৎকালীন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের প্রচেষ্টায় ১৯০৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তদানীন্তন বৃটিশ শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ মিউনিসিপালিটি (৮.৫৫ বর্গ কি.মি. আয়তন বিশিষ্ট) এর কর্মকাণ্ড শুরু করে, যার প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বাবু গিরিশ চন্দ্র মৌলিক। তারপর থেকে কখনও জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি কখনও প্রশাসনের নির্ধারিত ব্যক্তি দ্বারা পৌর কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এভাবে একশ বছরে চেয়ারম্যান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহাকুমা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকগণ পর্যায়ক্রমে পৌর দায়িত্বে আবর্তিত হয়েছেন। জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে অদ্যবধি ১৯ জন চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালনের ফাঁকে অর্ন্তবর্তীকালীন  সময়ে মহাকুমা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকগণ দায়িত্ব পালন করেছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার স্বাধীন দেশের প্রথম চেয়ারম্যান  হন সেরাজুল হক শনি মিয়া। বিশেষ করে পৌর দুই চেয়ারম্যান  জননন্দিত জনাব এহ্সান আলী খান ও আব্দুল মান্নান সেন্টু উন্নয়নের সোপান গড়ে তুলেছিলেন নিঃসন্দেহে। ২০০০ সালে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতায় সুনাম অর্জন, ২০০১ সালে সারা দেশের মধ্যে বৃক্ষরোপনে প্রথম স্থান লাভ করে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত এবং অক্টোবর, ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক সুশাসন (গুড গভার্নেন্স) বিভাগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা শ্রেষ্ঠ পৌরসভা নির্বাচিত হয়। মহানন্দা নদীর দক্ষিণ পাড়ে গড়ে উঠা চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা রাজধানী ঢাকা হতে প্রায় ৩২০ কি.মি. পশ্চিমে অবস্থিত। কালের ক্রান্তি পার করে ধাপে ধাপে অগ্রসর হয়ে পৌরসভা শতবর্ষ অতিক্রম করেছে। আম্র কাননে পরিবেষ্টিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রাচীন গৌড় বঙ্গের পাল বংশ, সেন বংশ ও হোসেনশাহী আমলের অজস্র স্মৃতি ধারণ করে আছে। জেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ইতিহাস অতি পুরাতন।

chapaipoura

বর্তমানে ২৪.৬০ বর্গ কি.মি. আয়তন বিশিষ্ট পৌরসভাটি ১৫টি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে গঠিত। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরটি প্রসিদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে পরিগণিত। এখানে বহু সংখ্যক ধানের চাতাল, মেশিন চালিত ধানের কল, হিমাগার, কাঁসা ও পিতল শিল্প, রেশম শিল্প গড়ে উঠেছে। সোনা মসজিদ স্থল বন্দর আমদানী, রপ্তানির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যার প্রভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাতে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার লাভ করেছে এবং পৌরসভার অধিবাসীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। শহরটি প্রধান সড়কের কোল ঘেঁসে সম্প্রসারিত হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা প্রতিষ্ঠার সময় পৌর এলাকায় কোন পাকা রাস্তা ছিল না। ১৯৩৪-৩৫ সালে ভারতবর্ষের ব্রিটিশ তেল কোম্পানী সমগ্র ভারতের পৌরসভাগুলোকে তাদের লাভের অংশ থেকে কিছু অনুদান বরাদ্দ প্রদান করেন পৌর এলাকার রাস্তা উন্নয়নের জন্য। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা সেই সময় ২০০০/- (দুই হাজার) টাকা বরাদ্দ পায়। সেই টাকায় তৎকালীন পৌর চেয়ারম্যান গঙ্গাচরণ বাবু  হাসপাতাল থেকে বড় ইন্দারা পর্যন্ত (গোদাগাড়ী রোড) পিচ ঢালা রাস্তা তৈরী করেন, যা  চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার প্রথম তৈরী করা পাকা রাস্তা। ১৯৬২ সালের পূর্ব পর্যন্ত প্রায় প্রতি বছর হাসপাতাল থেকে রেল স্টেশন অবধি খোয়া সুরকির রাস্তা তৈরী করা হতো আর ধান উঠার সময় গরুর গাড়ি চলাচলের ফলে সে রাস্তা নষ্ট হয়ে যেত। ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত সময়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার রাস্তাঘাটের প্রভুত উন্নতি হয়। সে সময় সড়ক আলোকিত করার জন্য কেরোসিন তেলের বাতি ব্যবহার করা হতো যা আজও পৌরসভার দু একটি স্থানে কালের সাক্ষী হয়ে  নিজের অস্তিত্ব ঘোষণা করে যাচ্ছে।

আবহমান বির্বতনে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপ্মেন্ট ফান্ড (BMDF) এর অর্থায়নে ২৭ এপ্রিল ২০০৫ হতে হাইপ্রেসার সোডিয়াম লাইট স্থাপনের মধ্য দিয়ে পৌরবাসীদেরকে রাত্রীকালীন আলো প্রদানের নয়া দিগন্তের দ্বার উন্মোচিত হয়। পৌরসভার কর ছাড়া নিজস্ব আয় কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য জনাব এহসান আলী খান সর্ব প্রথম পৌর মার্কেট নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। আলিয়া মাদ্রাসার সামনে প্রথম পৌর মার্কেট নির্মিত হয়। পরে নির্মিত হয় পৌর মডার্ণ মার্কেট (নিউ মার্কেট)। ১৯৭৫ সালে পৌরসভা দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নিত হয়। ১৯৮৪ সালে নামোশংকরবাটি, নয়াগোলা ও খামার  এই তিনটি পুর্নাঙ্গ ইউনিয়ন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার অর্ন্তভুক্ত হয়। আব্দুল মান্নান সেন্টু  দ্বিতীয় শ্রেণীর পৌরসভাকে প্রথম শ্রেণীতে রূপান্তরের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যান যার প্রেক্ষিত ১৯৮৫ সালের ১২ই আগষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা প্রথম শ্রেনীর মর্যাদা লাভ করে। অতঃপর বিভিন্ন পরিষদ একের পর এক নানামুখী উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ প্রকল্প-৩, সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড, কোভিড-১৯ রেসপন্ড এ্যন্ড রিকভারি প্রজেক্ট বাস্তবায়ন। ফলে সেবার মান প্রতিনিয়ত উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। তৎকালীন  শহরের কেন্দ্রস্থলে বড় ইন্দারার মোড়ের কয়েক গজ উত্তরে রাস্তার বাম পার্শ্বে নির্মিত হয়েছিল পৌর ভবন। অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরিসরে সৃষ্ট পৌর ভবনটি  কালের সাথে তাল মিলিয়ে একটু একটু করে সেজে তিলোত্তমা হয়ে বর্তমান রূপ পরিগ্রহ করেছে।